December 26, 2024, 6:43 pm
অমল তালুকদার,পাথরঘাটা (বরগুনা) থেকে:
সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বঙ্গোপসাগরে দেয়া ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞার এমন অব্যবস্থাপনা দেখা যায়নি আর সাম্প্রতিককালে। একদিকে ঘোষিত অবরোধ, অপরদিকে হাটে বাজারে মিলছে ইলিশ সহ সামুদ্রিক মাছ!
ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সফল হওয়ায় এই পথেই এগুচ্ছিল সরকার। গত ২০ মে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে। শেষ হবে চলতি মাসের ২৩ জুলাই। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মৎস্য আইনের সংশোধনে ২০১৫ সালের ১৯ ধারায় প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ফিশিং ভ্যাসেলে মাছ শিকার বন্ধের আইন করা হয়। তবে এ আইনের আওতায় গত তিন বছর ধরে উপকূলের ইঞ্চিন চালিত কাঠের ট্রলার গুলোকেও আনা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য -২ (আইন) অধিশাখা এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনটিতে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তবে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করছে অসাধু জেলেরা। তাদের দাবি নৌ পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সোর্সদের কাছে টাকা দিয়ে তাদের ম্যানেজ করেই তারা গভীর সমুদ্রে যাচ্ছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করছে নৌ-পুলিশ। কোষ্টগার্ড বলছে এমন কোন প্রমাণ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৎস্য ট্রলার মালিক আবুল হোসেন ফরাজি সাংবাদিকদের জানান, গভীর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় দেশীয় ট্রলারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভারতীয় ট্রলার মাছ শিকার করছে। আমরা আমাদের সীমানায় জাল ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষা করলে ভারতীয়রা আমাদের জেলেদের তাড়িয়ে দেয়। ‘তারা বলে তোদের দেশে অবরোধ তোরা মাছ শিকার করো কেন?’ তিনি বলেন,আমাদের জলসীমায় আমাদেরকেই মাছ ধরতে দেয়না ভারতীয় জেলেরা। এমন অবরোধ দিয়ে আমাদের লাভটা কি? এমন প্রশ্ন তুলেছেন পাথরঘাটার জেলে ও ট্রলার মালিকরা। তবে গভীর বঙ্গোপসাগরে কোস্টগার্ডের নিয়মিত পেট্রোল টহল চলছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কোষ্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কে এম শফিউল কিঞ্জল। তিনি জানান, যদি কোষ্টগার্ডের কাউকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকারে যায় প্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে ঘাটে বিক্রি করতে এসে মৎস্য বিভাগের অভিযানের আটকা পড়ে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। সাথে নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। গত তিন দিনে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য বিভাগের অভিযানে সাতটি ট্রলার থেকে আদায় হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। যা কতৃপক্ষ যেন দেখেও দেখছে না। জেলেরা জানান গত দুদিন আগে একটি অভিযান চালিয়ে মংলায় নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৩৫ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে। কিন্তু পাথরঘাটার কোস্টগার্ড সদস্যরা নদীতে টহল না দিয়ে স্থলে অভিযান চালায়। আর তাদের সোর্সদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে অসাধু জেলেরা নির্ভয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে।
পাথরঘাটা মৎস্য ঘাট এলাকায় কোন মাছ ধরা ট্রলার চোখে পরছে না। জানা যায় এসব ট্রলার মাছ শিকার করে গভীর রাতে ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রি করে আবার সমুদ্রে চলে যায়।
চরদুয়ানী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইশান জানান, নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানে আটক হয়ে জেলেরা নিজেদের বাঁচাতে আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার দায়ে আমরা থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় রাতে অভিযান চালাই। গত তিন দিনে আটক ৭টি ট্রলারের মাছ অকশনে বিক্রি করে তাদেরকে সমপরিমান অর্থদণ্ড করি। এতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা সরকারি ফান্ডে জমা হল#